নৌপরিবহন অধিদপ্তরের জাল সার্টিফিকেট তৈরি ও অধিদপ্তরের ভুয়া ওয়েবসাইটে আপলোড করে আন্তর্জাতিক জাহাজে চাকরি দেওয়ার মূল হোতা সিরাজুল আজাদসহ পাঁচ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এসময় তাদের কাছ থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন মালামাল জব্দ করা হয়।

সোমবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে মালিবাগ সিআইডি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত ডিআইজি কামরুল আহসান এ তথ‌্য নিশ্চিত করেন।

তিনি বলেন, ‘‘রোববার (২৭ ফেব্রুয়ারি) সিআইডির সাইবার পুলিশ ইউনিট উত্তরখানের ওরিয়েন্টাল গ্লোবাল ইন্টারন‌্যাশনাল মেরিটাইম একাডেমিতে অভিযান পরিচালনা করে ম্যানেজিং ডিরেক্টর সিরাজুল আজাদ, পরিচালক মঞ্জুরুল আজাদ, তারিকুল আজাদ, আইটি অফিসার মো. রাশেদুল ইসলাম, সাবেক আইটি অফিসার মোহাম্মদ সোহেল রানাকে গ্রেপ্তার করা হয়। সমুদ্রগামী জাহাজে কর্মকর্তা, নাবিকদের যোগ্যতা সনদ পরীক্ষা গ্রহণ, পরিচালনা এবং বিভিন্ন সার্টিফিকেট ইস্যু করার একমাত্র প্রতিষ্ঠান নৌপরিবহন অধিদপ্তর।

‘গ্রেফতারকৃতরা এই প্রতিষ্ঠান থেকে এসব সার্টিফিকেট প্রদান করে থাকে। সার্টিফিকেট অফ প্রফিসিয়েন্সি (সিওপি) ও সার্টিফিকেট অফ কম্পিটেন্স(সিওসি) ইত্যাদি। যোগ্যতা সনদ নামে এ প্রতিষ্ঠান অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক জাহাজে কর্মরত নাবিক ও কর্মকর্তাদের বিভিন্ন সার্টিফিকেট ইস্যু করে থাকে যা তাদের নিজস্ব সরকারি ওয়েবসাইট www.dos.gov.bd তে সবসময় আপলোড থাকে।

‘সাইবার পুলিশ সেন্টার (সিপিসি), সিআইডি, নৌপরিবহন অধিদপ্তর থেকে এমন অভিযোগ পায় যে, এক প্রতারক চক্র তাদের প্রতিষ্ঠানের নামে ভুয়া ওয়েবসাইট তৈরি করে যোগ্যতা সনদ যাচাইয়ের কথা বলে প্রতারণা করে আসছে এবং বহির্বিশ্বে মেরিটাইম ইন্ডাস্ট্রিতে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে।”

তিনি আরও বলেন, ‘অনুসন্ধান করে জানা যায়, গ্রেপ্তারকৃত সোহেল রানা একজন দক্ষ ওয়েব ডেভেলপার। সে এই চক্রের মূল হোতা ও ওয়েবসাইটটির ডিজাইনার। এর আগেও এ প্রতারক বিভিন্ন স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানের নামের সাথে মিল রেখে ওয়েবসাইট তৈরি করে প্রতারণা করেছিল। তাদের কাছ থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত দুটি ল্যাপটপ, দুটি HDD হার্ডডিস্ক, দুটি SSD হার্ডডিস্ক, একটি পেনড্রাইভ, ছয়টি মোবাইল ফোনসহ বেশকিছু ডিজিটাল আলামত জব্দ করা হয়।’

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রতারক চক্রের সদস্যরা জানিয়েছে, একটি ডোমেইন ও হোস্টিং কিনে নৌপরিবহন অধিদপ্তরের অনুকরণে ‘www.dos-gov-bd.online’ নামে একটি ওয়েবসাইট তৈরি করে। সেই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে নকল COP সার্টিফিকেট ভেরিফাইড দেখিয়ে তারা এ পর্যন্ত শতাধিক নাবিককে বিভিন্ন রেটিংসে বিভিন্ন মার্চেন্ট শিপে চাকরি দিয়েছে।

গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে ফেইক ওয়েবসাইট তৈরির কাজে ব্যবহৃত কম্পিউটারে সংশ্লিষ্ট ডাটাবেস সার্ভারে ইন্সটল করা অবস্থায় পাওয়া যায়। যেখানে COP নম্বর সম্বলিত ১২০ এর অধিক সার্টিফিকেটের তথ্য বিভিন্ন সময়ে আপলোড করা হয়েছে। এ অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানান ডিআইজি কামরুল আহসান।